চকরিয়া বদরখালীর প্রবাসী হেলালউদ্দিন শিপু হত্যা মামলার প্রধান আসামী বিএনপি নেতা ইকবাল বদরীসহ ১৭জনের নাম অর্থের বিনিময়ে চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত ৩০ডিসেম্বর বাদিকে না জানিয়ে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। মূল আসামীদের বাদ দেওয়ায় বাদীর পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
গ্রেফতারকৃতরা আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার পরও প্রকৃত খুনিদের নাম বাদ দেওয়ায় কক্সবাজার সিআইডির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। নিহত শিপুর মা বাদী ছকিনা বেগম চার্জশিটের বিরুদ্ধে নারাজি দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বাদী ছকিনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, হেলালউদ্দিন শিপু হত্যায় জড়িতদের আড়াল করতে দুই বছর পর দূর্বল চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে খুনিরা নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে আসছিলো। তিনি বলেন, শুরুতেই মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছিলেন চকরিয়া থানার ওসি (তদন্ত) কামরুল আজম। পরবর্তীতে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য কক্সবাজার সিআইডি’র হাতে হস্তান্তর করা হয়। হত্যার পরপরই বেশ কয়েকজন এজাহারভূক্ত আসামী গ্রেফতার হলেও পুলিশের গাফেলতির কারণে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যান। মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে আসামীরা মিশনে নামেন টাকার থলে নিয়ে। গ্রেফতারকৃত আসামীরা আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা কক্সবাজার সিআইডির ওসি জাকির হোসেন মাহমুদ ২০১৬সালের ৩০ডিসেম্বর অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। চার্জশিট দেওয়ার বিষয়টি কোন মতে স্বীকার করছেন না তদন্ত কর্মকর্তা। আদালতে জমা দেওয়া চার্জশিটে চকরিয়া থানার ওসি (তদন্ত) কামরুল আজম, কক্সবাজার সিআইডির ওসি জাকির হোছাইন মাহমুদ ও চট্টগ্রাম সিআইডির সহকারি পুলিশ সুপার অহিদুর রহমান পিপিএমের নাম রয়েছে।
শিপুর পরিবার জানান, তদন্ত কর্মকর্তা বিভিন্ন সময় তদন্তের জন্য বদরখালীতে আসলেও কোন সময় বাদির সাথে যোগাযোগ করেননি। আসামীরা কখন গ্রেফতার হয় আবার কোন সময় রিমান্ডে নেওয়া হয় জানানো হয় না। স্বাক্ষীদের কখন স্বাক্ষী নেওয়া হয়েছে তা জানানো হয়নি। মূলত তিনি যোগাযোগ করেছেন আসামীর পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সাথে।
সর্বশেষ গত ৩০ডিসেম্বর বাদিকে না জানিয়ে প্রধান আসামী মাতামুহুরী থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল বদরী সহ ১৭জন আসামীকে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দাখিল করেন চকরিয়া উপজেলা জুড়িশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে। তাছাড়া মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ৭জন নিরহ এবং অচেনা লোককে চার্জশিটে নাম দেওয়া হয়েছে। বাদীর অভিযোগ, চার্জশিটের অনেক আসামীকে তিনি পরিচয় জানানে না। কিভাবে তারা আসামী হলো।
তদন্ত কর্মকর্তার কর্মকান্ড দেখে আগে থেকে সন্দেহ হয়েছিলো। তদন্ত কর্মকর্তাকে বদলানোর জন্য চট্টগ্রাম সিআইডি’র কাছে আবেদন করা হয়েছিলো। এরইমধ্যে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে দূর্বল চার্জশিট জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে প্রধান আসামী ইকবাল বদরী, নুরুল কাদের, ফজল কাদের, এম হোছাইন আহমদ, শাহাদত হোছাইন, আকতার হোছাইন, মো: ইউসুফ বদরী, মাহবুবুল আলম, বদিউল আলম, আবদুর রহমান, ওবাইদুল মোস্তফা ইমন, আক্কাছ আলী, মো: শাহাবউদ্দিন, হেদায়ত হোছাইন মিন্টু, তহিদুল ইসলাম, মোজাম্মেল হক।
তদন্তকারী কর্মকর্তা জাকির হোছাইন মাহমুদ জানান, মামলাটি শুরুতেই তদন্ত করেছিলাম। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনের জন্য চট্টগ্রাম সিআইডির কাছে আবেদন করেন বাদী ছকিনা বেগম। এরপর থেকে আর দায়িত্ব ছিলো না। চট্টগ্রাম সিআইডি পুলিশই চার্জশিট আদালতে দাখিল করেছেন বলে তিনি জানান।
এদিকে বাদি ছকিনা বেগম আসামীদের বাদ না দেওয়ার জন্য ২০১৬ সালের ২অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি আবেদন করেন। এরপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক ফরিদ আহম্মদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার নেওয়ার নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেন। কিন্তু এরপরও তদন্ত কর্মকর্তা এসব বিষয়ে পাত্তাই দেয়নি।
গত বছরের ৩ নভেম্বর চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে কুতুবদিয়াপাড়া এলাকায় বদরখালী কৃষি ও উপনিবেশ সমবায় সমিতির বরাদ্দকৃত জমির বিরোধ নিয়ে হেলালউদ্দিন শিপুকে বিএনপি নেতা ইকবাল বদরী নেতৃত্বে হত্যা করে। ওইসময় ৩-৪টি ঘর-বাড়িও জালিয়ে দেওয়া হয়। লুটপাঠ করা হয় সহায় সম্পদ। একই বছরের ৬ নভেম্বর শিপুর মা বাদি হয়ে চকরিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। জিআর-৪৮০। ওই মামলায় বিএনপি নেতা ইকবাল বদরী সহ ৩০জন সহ অজ্ঞাতনামা ১০-১৫জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছিলেন। ##
পাঠকের মতামত: